কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী সৃষ্ট উত্তেজক পরিস্থিতি, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি, স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ নানা কারণে উদ্বিগ্ন প্রবাসী এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিক্ষোভ করছেন তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছে সরকার। বিশ্বের নানা দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস, হাইকমিশন এবং অনাবাসিক মিশনগুলোর মাধ্যমে হোস্ট গভর্মেন্টের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার ওই চিঠি পাঠানোর বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ঢাকায় থাকা বিভিন্ন দেশের মিশন এবং বাংলাদেশ দেখভালকারী দিল্লিস্থ বিভিন্ন দেশের মিশনকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ক’দিনে ঢাকায় কূটনৈতিক ব্রিফিং ছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ৬টি নোট পাঠানো হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিকেশনে কোনো ঘাটতি হয়নি। এতদিন আমরা দুনিয়াকে ঘটনাগুলোর বিষয়ে রিপোর্ট করেছি। যাতে তারা তাদের দেশের গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত গুজব এবং অসত্য তথ্যে বিভ্রান্ত না হোন। এবার আমরা তাদের সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। আমরা চাই- ওই সব দেশে যে বা যারা বিক্ষোভ করছে তার কারণ এবং মোটিভ সম্পর্কে জানতে। আমরা দেশগুলোর সরকারের কাছ থেকে বিক্ষোভের বিস্তারিত তথ্য পেতে চাই।
বিক্ষোভকারীদের ডিমান্ড কী? সে সম্পর্কেও আমরা বুঝতে চাই। এতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে। সচিব বলেন, প্রায় প্রতিটি চিঠিতেই আমরা আমাদের মিশনগুলোকে হোস্ট গভর্মেন্টের সঙ্গে অ্যাঙ্গেইজমেন্ট বাড়ানোর পাশাপাশি একাডেমিয়া, গণমাধ্যম বিশেষত সম্পাদকদের ঘটনাবলীর বিষয়ে নিয়মিতভাবে অবহিত করতে এবং স্যানসেটাইজ করতে বলেছি। কারণ বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক রিপোর্ট প্রচার হচ্ছে, যার মধ্যে অসত্য তথ্য রয়েছে। আমরা এসব কাউন্টার করে ঘটনা সম্পর্কে সরকারের ভাষ্য তুলে ধরতে বলেছি এবং তারা তা-ই করছেন। বিদ্যমান এই কঠিন পরিস্থিতিতে ঢাকায় কূটনৈতিক ব্রিফিং অনুষ্ঠানের পর একদল কূটনীতিককে আন্দোলনের ক্ষয়ক্ষতির খানিকটা সরজমিন দেখাতে অকুস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ছবি-ভিডিও ফুটেজ দেখার পর স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পেয়ে নিশ্চয় ঘটনার বিষয়ে তাদের উপলব্ধি আরও গভীর হয়েছে। তারা ভাঙা কাঁচ আর পোড়া গন্ধ সহ্য করে কষ্ট করে ঘটনাস্থলগুলো ঘুরে দেখেছেন। এদিকে এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার সুযোগ নিয়ে বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে মনগড়া কনটেন্ট বানিয়ে গুজব ছড়ানোর অপতৎপরতা চলছে। এটি প্রতিরোধে বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলো কাজ করছে।
মন্ত্রী বুধবার জানান, আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার ও সাজা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া লস অ্যানজেলেসে বাংলাদেশ মিশনসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে পাকিস্তানিরাও জড়িত ছিল বলে দাবি করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকে রাষ্ট্র আক্রান্ত এবং বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এবং সেখানে স্বাধীনতাবিরোধী, বিএনপি-জামায়াত, জঙ্গিগোষ্ঠী অনেক জায়গায় সেখানকার পাকিস্তান কমিউনিটির সহায়তা নিয়েছে, আমাদের কাছে তথ্য-প্রমাণ আছে। মন্ত্রীর বক্তব্যে কূটনৈতিক অঙ্গনে এ সময়কালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাও উঠে আসে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি মিশনগুলোর কাছে নোট পাঠিয়েছিলাম যে, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এটি নিয়ে বিদেশি দূতাবাসগুলো বা কূটনীতিকরা গণমাধ্যমে যেনো কোনো বিবৃতি না পাঠায়। তারা সেটি মেনে চলেছে। এ জন্য আমরা তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাই।
সূত্রঃ যুগান্তর